সাইলেজ হলো এমন এক পদ্ধতি যেখানে শুষ্ক মৌসুমের মতো ঘাটতির সময়ে গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য ঘাস আগে থেকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এ জন্য ঘাসগুলোকে কেটে পুষ্টিগুণ (যেমন শর্করা এবং প্রোটিন) যতটা সম্ভব ধরে রাখার জন্য গাঁজানো (ফার্মেন্টেশন) হয়। সেই সাথে পশুদের সক্ষমতা বাড়াতে তাদের খাবারে পুষ্টি যুক্ত করা হয়।
ইউএনবি জানতে পেরেছে যে সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ‘প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে ৪৭৫ উপজেলায় ১১৬ কোটি ৭৩ লাখ ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এর আগে, ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে ‘একটি ভালো প্রকল্প’ হিসেবে উল্লেখ করেন। উচ্চমানের ঘাসের চাষ প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে উপযুক্ত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রকল্পের আওতায় ঢাকার সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে স্থায়ী ঘাসের জার্মপ্লাজম নার্সারি স্থাপন এবং খামারি পর্যায়ে ৮ হাজার ৯৭০টি উচ্চ উৎপাদনশীল উন্নত জাতের স্থায়ী-অস্থায়ী ঘাসের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে। এছাড়াও বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণের জন্য ১৭ হাজার ৯৪০টি খামারে সাইলেজ প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হবে।
প্রকল্পের অন্যান্য বড় কাজের মধ্যে রয়েছে অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাসের বীজ বিতরণ, ফিড এডিটিভস (ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স) ও কৃমিনাশক বিতরণ, কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট নির্বাচন এবং জনসচেতনতা বাড়ানো।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তা দুধ এবং মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, ‘কাঁচা ঘাস গবাদিপশুর চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করায় এখন কৃষকদের দানাদার খাবারের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে ব্যয় বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে দুধ উৎপাদন ব্যয়।
‘বর্তমানে দুধ উৎপাদন ব্যয় প্রতি লিটারে প্রায় ৪০ টাকা। তাই কৃষকদের বেশির ভাগই মাংসের জন্য গরু মোটাতাজা করতে আগ্রহী,’ বলেন তিনি।
জাকির হোসেন বলেন, বাণিজ্যিকভাবে গৃহপালিত পশু সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উন্নত জাতের নেপিয়ার পাকচং ঘাসের চাষ জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের এ সদস্য জানান, দেশে নেপিয়ার ও জার্মান ঘাসের উৎপাদন ৬০-৭০ লাখ মেট্রিক টন। ২০ বছর আগে দেশে নেপিয়ার ঘাসের চাষ শুরু হয়েছিল। এখন উন্নত বিশ্ব নেপিয়ার ঘাসের হাইব্রিড জাত পাকচং চাষ শুরু করেছে।